রমজান মাসে ইফতার আইটেমের অন্যতম জনপ্রিয় একটি খাবার হলো হালিম। শুধু ইফতারে নয়, এটি ঈদ উপলক্ষেও বাসা-বাড়িতে তৈরি করা হয়। আর বাড়িতে সবচেয়ে মজাদার বা রেস্টুরেন্ট এর স্বাদে হালিম তৈরি করার সহজ উপায় হলো প্যাকেট মসলা ব্যবহার করা।
অনেকে মনে করেন যে প্যাকেট মসলা ব্যবহার করে হালিম তৈরি করলে হয়তো হালিমের স্বাদটা রেস্টুরেন্ট এর মতো হবে না। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারনা। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা প্যাকেট মসলা ব্যবহার করে কিভাব মজাদার হালিম রান্নার রেসিপি শিখবো। সেই সাথে থাকবে কিছু ছোট ছোট টিপস, যা হালিমটাকে আলাদা স্বাদ এনে দিবে। চলুন হালিম রান্নার রেসিপিটি শুরু করা যাক।
হালিম তৈরির উপকরণ
হালিম মিক্স, গরু বা খাসির মাংস, পেয়াজ কুচি, আদা বাটা, রসূন বাটা, মরিচের গুড়া, হলুদের গুড়া, ধনিয়ার গুড়া, জিরার গুড়া, মেথির গুড়া, লবন, আদা কুচি, শশা কুচি, কাঁচা মরিচ কুচি, ধনে পাতা কুচি, পেয়াজ ভেরেস্তা ও লেবু।
হালিম রান্না করার নিয়ম
১ম ধাপ: হালিম রান্না করার জন্য প্রথমত আমাদের লাগবে এক প্যাকেট হালিম মিক্স। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির হালিম মিক্সের প্যাকেট পাওয়া যায়। আপনাদের পছন্দ অনুযায়ী যেকোন একটি ব্রান্ডের এক প্যাকেট হালিম মিক্স কিনে নিবেন। আমি রাধুনী হালিম মিক্সের প্যাকেট ব্যবহার করছি।
হালিম মিক্সের প্যাকেটে সাধারনত দুইটি প্যাকেট থাকে। একটি বড় প্যাকেট এবং আরেকটি ছোট প্যাকেট। বড় প্যাকেটে থাকে ডাল ও শষ্য মিশ্রিত এক ধরনের গুড়া, যা হালিম রান্নার প্রধান উপাদান। আর ছোট প্যাকেটে থাকে হালিম রান্নার গুড়া মসলা।
আমরা প্রথমে হালিম মিক্সের বড় প্যাকেটটি কেটে ডাল ও শষ্যের মিশ্রনটাকে একটি বাটিতে নিবো এবং এতে দুই কাপ পরিমান গরম পানি যোগ করবো। গরম পানিটা আস্তে আস্তে যোগ করতে হবে এবং গরম পানিতে ডালটাকে আস্তে আস্তে ভলোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। ডালটাকে গরম পানিতে ভালোভাবে মেশানোর পর আমরা এই গরম পানিতে ডালটাকে ১০-১৫ মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখবো।
এবার আমরা হালিম মিক্সের ছোট প্যাকেটটি কেটে গুড়া মসলাটা বের করে অন্য একটি বাটিতে রাখবো। এটি আমরা একটু পর রান্নায় ব্যবহার করবো। এবার চলে যাবো মূল রান্নায়।
২য় ধাপ: এই পর্যায়ে আমরা চুলায় একটি কড়াই বসিয়ে দিবো এবং কড়াইতে আধা কাপ পরিমান সয়াবিন তেল দিয়ে দিবো। তেলটা গরম হয়ে আসলে দিয়ে দিবো আধা কাপ পেয়াজ কুচি।
পেয়াজটাকে ১-২ মিনিট ভেজে নেওয়ার পর পেয়াজের রং একটু পরিবর্তন হয়ে আসলে দিয়ে দিবো এক চা চামচ পরিমান আদা বাটা, এক চা চামচ পরিমান রসূন বাটা, আধা চা চামচ মরিচের গুড়া, আধা চা চামচ হলুদের গুড়া, আধা চা চামচ ধনিয়ার গুড়া এবং আধা চা চামচ জিরার গুড়া। মসলাটাকে এবার ভালোভাবে মিক্স করে ভুনে নিবো। মসলাটাকে আমাদের এমনভাবে ভুনে নিতে হবে যেন মসলার কোন কাঁচা গন্ধ না থাকে।
৩য় ধাপ: মসলাটা ভুনা হয়ে গেলে আমরা মসলার সাথে আধা কেজি গরুর মাংস দিয়ে দিবো। (মাংসটাকে একটু ছোট টুকরো করে নিলে সবচেয়ে ভালো হয়। আর আপনারা চাইলে গরুর মাংসের পরিবর্তে মুরগি কিংবা খাসির মাংস ব্যবহার করতে পারেন।)
মাংসের সাথে দিয়ে দিবো হালিম রান্নার গুড়া মসলা এবং এক চা চামচ পরিমান লবন। এক্ষেত্রে সব মসলা একসাথে দিবো না। আমরা এক চামচ পরিমান মসলা রেখে দিবো পরবর্তিতে কাজে লাগানোর জন্য। আর লবনটা অতিরিক্ত দিবেন না। কারন হালিমের মসলায় লবন দেওয়া থাকে।
মসলাসহ মাংসটা আমাদের ১০-১৫ মিনিট মতো কষিয়ে নিতে হবে। মাংসটাকে ১০-১৫ মিনিট কষিয়ে নেওয়ার পর আমরা মাংসের সাথে আরও দুই কাপ গরম পানি যোগ করবো। এবার মাংসটাকে আরেকটু নেড়েচেড়ে Medium হিটে একটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখবো এবং মাংসটা সেদ্ধ হয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।
মাংসটা ভালোভাবে সেদ্ধ হয়ে গেলে একটি চামচের সাহায্যে কড়াই থেকে মাংসগুলো তুলে নিয়ে একটি আলাদা বাটিতে রাখবো। তবে দু-একটি মাংস কড়াইতে রেখে দিবো।
এবার কড়াইতে রেখে দেওয়া মাংসগুলো চামচের সাহায্যে যতটুকু সম্ভব ভেঙ্গে নিবো। এতে করে হালিমের ডালটা রান্নার সময় মাংসের ফ্লেভারটা ভালোভাবে ঢুকবে। এ পর্যায়ে আমরা আগে থেকে গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখা ডাল ও শষ্যের মিশ্রনটা কড়াইতে দিয়ে দিবো।
ডালের সাথে সবকিছু ভালোভাবে নেড়েচেড়ে মিশিয়ে নেওয়ার পর দিয়ে দিবো ৬ কাপ গরম পানি। এবার আমরা ডালটা ভালোভাবে সেদ্ধ করে নিবো। ডালটা সেদ্ধ হতে প্রায় ৪৫ মিনিট বা ১ ঘন্টা সময় লাগতে পারে। ডালটা সেদ্ধ করার সময় চুলার আঁচ Medium এ রাখতে হবে এবং মাঝেমাঝে নেড়েচেড়ে দিতে হবে, যাতে ডালটা পুড়ে কড়াইয়ের গায়ে লেগে না যায়।
ডালটা ভালোভাবে সেদ্ধ হওয়ার পর আগে থেকে তুলে রাখা মাংসগুলো দিয়ে দিবো এবং ডালের সাথে মিশিয়ে নিবো। আমাদের হালিম রান্না প্রায় শেষ। এখন হালিমের সাথে একটি মিশ্রন এড করবো। এতে হালিমে রেষ্টুরেন্টের স্বাদ পাওয়া যাবে।
চতুর্থ ধাপ: মিশ্রনটা তৈরি করার জন্য চুলায় একটি কড়াই বসিয়ে আমরা কড়াইতে দিয়ে দিবো তিন টেবিল চামচ সয়াবিন তেল। তেলটা গরম হয়ে আসলে আগে থেকে রেখে দেওয়া হালিম মিক্সের মসলাটা দিয়ে দিবো। সাথে দিয়ে দিবো আধা চা চামচের মতো মরিচের গুড়া এবং সামান্য কিছুটা মেথির গুড়া। এবার এই মসলাটাকে তেলে ১ মিনিট মতো ভুনে নিবো। এতে আমাদের মিশ্রনটাও রেডি হয়ে গেল।
পঞ্চম ধাপ: সর্বশেষ ধাপে আমরা ভুনে নেওয়া মসলার মিশ্রনটা হালিমের সাথে দিয়ে দিবো এবং ভালোভাবে মিক্স করে নিবো। তৈরি হয়ে গেলো হালিম রান্নার রেসিপি। হালিম রেসিপি পরিবেশন করার পালা।
হালিম রেসিপি পরিবেশন
পরিবেশনের জন্য একটি পাত্রে আমরা কিছুটা হালিম নিবো। তারপর হালিমের উপর ছড়িয়ে দিবো কিছুটা আদা কুচি, শশা কুচি, কাঁচা মরিচ কুচি, ধনে পাতা কুচি, পেয়াজ ভেরেস্তা ও চাকতি আকারে কেটে নেওয়া দুএকটি লেবু। এবার পরিবারের সবাই মিলে উপভোগ করুন রেষ্টুরেন্টের স্বাদের মজাদার হালিম।
হালিম রান্নার রেসিপি সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা
প্রশ্নঃ ১ কেজি হালিম কতজন খেতে পারবে?
উত্তরঃ উপরের নিয়মানুযায়ী এবং সব উপকরন ব্যবহার করে হালিম রান্না করলে ১ কেজি হালিম ৬ জনে খেতে পারবে।
প্রশ্নঃ হালিম তৈরি করতে কি কি লাগে?
উত্তরঃ হালিম তৈরি করতে লাগবে এক প্যাকেট হালিম মিক্স, গরু বা খাসির মাংস, পেয়াজ কুচি, আদা বাটা, রসূন বাটা, মরিচের গুড়া, হলুদের গুড়া, ধনিয়ার গুড়া, জিরার গুড়া, মেথির গুড়া, লবন, আদা কুচি, শশা কুচি, কাঁচা মরিচ কুচি, ধনে পাতা কুচি, পেয়াজ ভেরেস্তা এবং লেবু।
প্রশ্নঃ হালিম কত দিন সংরক্ষণ করা যায়?
উত্তরঃ এয়ার টাইট বাক্সে রাখলে আপনি রান্না করা হালিম ৭ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারবেন।
প্রশ্নঃ হালিমের সাথে কি ভালো যায়?
উত্তরঃ হালিমের সাথে বা হালিম পরিবেশনের সময় আদা কুচি, শশা কুচি, কাঁচা মরিচ কুচি, ধনে পাতা কুচি, পেয়াজ ভেরেস্তা ও চাকতি আকারে কেটে নেওয়া দুএকটি লেবু ভালো মানায়।
প্রশ্নঃ হালিমের বীজ কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হয়?
উত্তরঃ হালিমের বীজটা অনেকেই এক ঘন্টা ভিজিয়ে রাখে। আবার অনেকে সারাদিন ভিজিয়ে রাখে। তবে আমাদের এই রেসিপিতে আমরা গরম পানিতে ১০-১৫ মিনিট মতো ভিজিয়ে রেখেছি।